বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি (পাঠ ৩)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বাংলাদেশের অর্থনীতি | - | NCTB BOOK
541
541

সাধারণত কোনো দেশই তার চাহিদার সমস্ত জিনিস নিজেরা উৎপাদন করতে পারে না। অন্য দেশ থেকে কিছু কিছু জিনিস তাকে আমদানি করতে হয়। একইভাবে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পণ্যের একটা অংশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। যে দেশে যে সামগ্রী প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় সাধারণত সেগুলোই বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এভাবে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা যেমন বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ব্যয় করা যায় তেমনি দেশের উন্নয়নেও কাজে লাগে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি এবং বিদেশে পণ্য রপ্তানি করার নামই বৈদেশিক বাণিজ্য। যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আধুনিক বিশ্বে বৈদেশিক বাণিজ্যের সুযোগ অনেক বেড়েছে। কোনো দেশই আজ তার চাহিদার সমস্ত জিনিস নিজেরা উৎপাদন করার কথা ভাবে না। বরং দেশের অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে যে পণ্যটা আমদানি বা যে পণ্যটি রপ্তানি করা সহজ ও লাভজনক, তাই করা হয়। একটি পরিকল্পনা ও নীতির আওতায় কাজটা করা হয়। বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক চুক্তির আওতায় এই আমদানি-রপ্তানি অর্থাৎ বৈদেশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর এই বাণিজ্যিক কার্যক্রম তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্য শুল্ক নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখার জন্য রয়েছে কতগুলো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা বা সংগঠন। যেমন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organisation: WTO), দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা (South Asian Free Trade Area: SAFTA) প্রভৃতি। যে দেশের আমদানির চেয়ে রপ্তানির পরিমাণ বেশি তাকে উন্নত দেশ ধরা হয়।

বাংলাদেশের আমদানি পণ্যসামগ্রী

বাংলাদেশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়মিত যেসব পণ্য আমদানি করে সেগুলো হলো চাল, গম, ডাল, তৈলবীজ, তুলা, অপরিশোধিত পেট্রোল ও পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, ভোজ্যতেল, সার, কৃষি ও শিল্প যন্ত্রপাতি, সুতা প্রভৃতি। আর যেসব দেশ থেকে এসব সামগ্রী আমদানি করা হয় তার মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই এই আমদানি বাণিজ্য চলে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী গত ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হয়েছে মোট ৪০,৭৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪০,৭০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪২,৯২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৪৭,০০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৬,০৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে ৭৫০৬২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য সামগ্রী আমদানি করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয়েছে চীন থেকে।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যসামগ্রী

এক সময় পাট ও পাটজাত দ্রব্যই ছিল আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য। পাট ও পাটজাত দ্রব্য যেমন-চটের ব্যাগ, কার্পেট প্রভৃতি রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করত। কিন্তু কিছু সময়ের জন্য সারা বিশ্বে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা কমে যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের দ্বারা পাটের 'জেনোম' বা জন্মরহস্য আবিষ্কার এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে আবারও পাট ও পাটজাত সামগ্রী রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য দ্রব্য ছাড়া আরও যেসব পণ্য বাংলাদেশ বিদেশে রপ্তানি করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তৈরি পোশাক, হিমায়িত চিংড়ি, ঔষধ সামগ্রী, চা, চামড়াজাত দ্রব্য, রাসায়নিক সামগ্রী প্রভৃতি। বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে পণ্য রপ্তানি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো-যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইটালি, নেদারল্যান্ড, কানাডা, জাপান প্রভৃতি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ২৭,০২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৩৪,২৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৪,৬৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪০,৫৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৫৫৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে রপ্তানি আয়ে শীর্ষে ছিল তৈরি পোশাক খাত। বাংলাদেশের পণ্যের বড়ো ক্রেতা হলো যুক্তরাষ্ট্র।

আমদানি ও রপ্তানির গুরুত্ব

বাংলাদেশ বিদেশ থেকে প্রধানত সেসব পণ্যই আমদানি করে যা দেশের মানুষের খাদ্য ও অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য দরকার। সময় মতো এসব পণ্য আমদানি না করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই দেশে এসব পণ্যের চরম অভাব ও মূল্যবৃদ্ধি ঘটত। আর তাতে দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিত। পৃথিবীর কোনো দেশই তার চাহিদার সমস্ত সামগ্রী নিজ দেশে উৎপাদন করতে পারে না। পরিকল্পিত বাণিজ্য নীতির আওতায় অন্য দেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য সুবিধাজনক দামে আমদানি করে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এর পাশাপাশি বাংলাদেশ বেশ কিছু পণ্য নিয়মিত বিদেশে রপ্তানি করছে। তা থেকে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। এই বৈদেশিক মুদ্রা শুধু দেশের অর্থনীতিকে সচলই রাখছে না এর ফলে দেশে শিল্প সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আমদানি হ্রাস করে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারি। আমরা জনগণকে যত বেশি উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত করতে পারব ততই অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠব। বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের শিল্প সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষ করে রপ্তানির বিষয়টিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।

কাজ-১: বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের একটি তালিকা তৈরি কর।
কাজ-১: আমদানি ও রপ্তানির গুরুত্ব সম্পর্কে কয়েকটি বাক্য লিখ।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion